প্রতিমা

সুভদ্রা একদিন আমায় Ironside এ নামিয়ে Forum এ কেনাকাটা করতে চলে গেছে, আমি বাড়ীতে ল্যাপটপে বসে কাজ করছি, এমন সময় হঠাৎ দরজায় বেল। এই ভর দুপুরে আবার কে এল?

 দরজা খুলে দেখি প্রতিমা।  

প্রতিমা আমাদের ফ্ল্যাটে দিনের বেলা ঠিকে কাজ করে। তাছাড়া রাত্রে সে মা’র ঘরে শুয়ে ঘুমোয়, দরকার পড়লে  উঠে মা’কে বাথরুমে নিয়ে যায়।   

সকালে আজ আমরা তাড়াতাড়ি বেরিয়েছি, প্রতিমা সকালে এসে ঘর ঝাড়াঝুড়ি করে দিয়ে গেছে, কিন্তু ঘর মোছার আর সময় পায়নি। আমায় বাড়ীতে দেখে একগাল হেসে প্রতিমা বললো, “আমি দেখতে এলাম তোমরা বাড়ীতে আছো কিনা। ঘরটা মুছে দিয়ে যাই?”

অবাক হয়ে গেলাম। কি কাজের মেয়ে বাবা? এরকম দায়িত্ববোধ দেখা যায়না।

জবা আমাদের বাড়ীতে চব্বিশ ঘন্টার লোক, সে বললো, “প্রতিমাদি কাজ ছাড়া থাকতে পারেনা। শীতলা মন্দিরের কাছে যে বাড়ীতে ও কাজ করে, তারা মাসে মাত্র এক হাজার টাকা দেয় আর কতো কাজ করিয়ে নেয়। রোজ সকালে বাজার করা থেকে শুরু করে রোগী দেখা, ঘর ঝাড়পোঁছ সব হাসিমুখে করে।”

মা র কাছে রোজ রাত্রে এসে শোয় প্রতিমা, কিন্তু শুয়েও যেন তার ঘুম আসেনা। জবা ওকে বলে, “প্রতিমাদি’ তুই সারারাত এই বারান্দায় হেঁটে বেড়া, তোকে আর ঘুমোতে হবেনা।”

প্রতিমা রোজ পাঁচ ছয়টা বাড়িতে কাজ করে রাত্রে মা’র কাছে গিয়ে শোয়, রাত্রে দরকার মতো উঠে মা’কে বাথরুমে নিয়ে যায়। সকালে মা কে ভাল করে তেল মালিশ করে স্নান করিয়ে তার পরে গড়িয়াহাটে বাজার করে শীতলা মন্দিরের কাছে এক বাড়িতে কাজ করতে যায়।

রাত্রে মা’র কাছে থাকে বলে তার গ্রামের বাড়িতেও নিয়মিত যাওয়া হয়না। মাসে দুমাসে একবার কি দুবার যায় কেবল, ছেলেকে টাকা দিতে।

প্রতিমা এত হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খাটে, তবু তার মুখে সবসময় হাসি। ওর শরীরে কি কোন ক্লান্তি নেই? কিছুদিন আগে তার মুখে একটা ঘা হয়েছিল অপারেশন করার পর মুখটা অল্প বেঁকে আছে, ক্যান্সার নয়তো?

না না, তা কি করে হয়? ক্যান্সার হলে কি আর এই খাটুনী সে খাটতে পারতো?

প্রতিমার বড় ছেলে সারদা চিট ফান্ডের এজেন্ট ছিল। সেই চিট ফান্ড ডুবে গেছে, চিটফান্ডের মালিক সুদীপ্ত সেন এখন জেলে। যাদের কাছ থেকে প্রতিমার ছেলে  টাকা নিয়েছিল, তারা এখন তার কাছ থেকে সেই টাকা ফেরৎ চাইছে। প্রায় পাঁচ লাখ টাকা সে কোথা থেকে ফেরৎ দেবে?

সারদার এরকম অনেক এজেন্ট টাকা ফেরৎ দিতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে শোনা যায়।

প্রতিমা তার ছেলেকে বলেছে তুই ভয় পাসনা, আমি রোজগার করে তোকে পাঁচ লাখ টাকা এনে দেবো।