
কুয়েতে পাসপোর্টে তিনটে নাম ছিল বাধ্যতামূলক। আরবদের রীতি অনুযায়ী প্রথম নাম হলো নিজের, দ্বিতীয় নাম বাবার, আর তৃতীয় নাম পরিবারের ও হতে পারে গ্রামের বা জন্মস্থানের ও হতে পারে, কিছু একটা হলেই হলো।
মোটমাট তিনটে নাম থাকতেই হবে।
আমাদের বন্ধু ধ্রুব মুখার্জী র পাসপোর্টে নাম ছিল SHRI DHRUBA MUKHERJEE.
সুতরাং কুয়েতে officially তাঁর নাম হয়ে গেল শ্রী। সিভিল আই ডি, ড্রাইভিং লাইসেন্স ইত্যাদি সব সরকারী কাগজপত্রে আরবী ভাষায় তাঁর সেই প্রথম নামটাই লেখা থাকতো, এবং সেই নামের পরে নামের বাকি দু’টো অংশ ধ্রুব আর মুখার্জ্জি।], যেগুলো তেমন ধর্ত্তব্যের মধ্যে নয়।
প্রথমে এ ব্যাপারটা ধ্রুব ঠিক বুঝতে পারেন নি।
কিন্তু এই নিয়ে তাঁর একবার একটা “বিশ্রী” অভিজ্ঞতা হয়েছিল।
একবার জাবরিয়াতে ট্র্যাফিক ডিপার্টমেন্টের অফিসে তিনি তাঁর driving license renew করতে গেছেন। অনেকক্ষণ হয়ে গেছে, ধ্রুব বসে আছেন। কাগজপত্র সব দেওয়া হয়ে গেছে, এখন তাঁর নাম ডাকার অপেক্ষা।
কিন্তু তাঁর নাম আর ডাকেনা। ধ্রুব বসে আছেন তো আছেন ই। ইতিমধ্যে হলঘর প্রায় খালি হয়ে আসছে, যাদের নাম ডাকা হচ্ছে তারা কাউন্টারে গিয়ে তাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে চলে যাচ্ছে।
নানা নাম ডাকা হচ্ছে, তার মধ্যে বেশ ব্যগ্র ভাবে ডাকা একটা নাম শোনা যাচ্ছে বার বার – “সিরি” – , কিন্তু ধ্রুব জানেন না যে তাঁকেই ডাকা হচ্ছে, তাই তিনি চুপ করে ধৈর্য্য ধরে লক্ষ্মী ছেলের মতো বসে আছেন।
কিন্তু এত দেরী হচ্ছে কেন? ধ্রুব মনে মনে একটু বিরক্ত আর অধৈর্য্য হয়ে পড়ছেন।
যে লোকটি তাঁর নাম ডাকছে, তারও ধৈর্যের বাঁধ প্রায় ভেঙে পড়ার অবস্থা। বেশ রাগী গলায় সে ডাকছে ওই অদ্ভুত নাম ধরে।
ওয়েন সিরি? ওয়েন সিরি?
আরবী ভাষায় ওয়েন মানে হলো কোথায়।
শেষে হল ফাঁকা হয়ে গেল, কেউ নেই, ধ্রুব একা বসে আছেন। ধ্রুব কাউন্টারে খোঁজ করতে যেতেই লোকটা রাগে ফেটে পড়লো।
আন্তা সিরি? (তুমি শ্রী? )
এতক্ষণে ধ্রুব বুঝতে পেরেছেন তাঁর ভুলটা কোথায় হয়েছে।
তারপর বেশ কিছুক্ষণ ধরে লোকটার একটানা অশ্রাব্য গালাগালি শুনতে হলো তাঁকে! একবিন্দু আরবী না জানলেও লোকটি যে কি বলছে তা বোঝা তাঁর পক্ষে খুব একটা কঠিন নয়।
বাংলায় তার গূঢ়ার্থ হচ্ছেঃ
ফাজলামী করার আর জায়গা পাওনি? আমার সাথে ইয়ার্কি হচ্ছে? এতক্ষণ ধরে তোমার নাম ডাকছি, কথা কানেই যাচ্ছেনা? বলি কানের মাথাটা কি খেয়েছো নাকি?