তাপস পাল

তোমরা যারা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস পড়েছো, তারা নিশ্চয় অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম শুনে থাকবে। অসিতবাবু হাওড়ার রামরাজাতলায় থাকতেন, সুভদ্রাদের বাড়ি থেকে খুব দূরে নয়। অসিতবাবুদের সাথে সুভদ্রাদের পারিবারিক পরিচয় ছিল। ওনার স্ত্রী বিনতা হাওড়া গার্লসে শিক্ষিকা ছিলেন।

বিনতাদির কাছে সুভদ্রা শুনেছে যে অসিতবাবু নাকি হিন্দী সিনেমার মারামারির দৃশ্য দেখতে খুব ভালবাসতেন। শনি আর রবিবারে দূরদর্শনে হিন্দী সিনেমা দেখানো হতো, ওনাদের বাড়ীর চাকরের নাকি কাজ ছিল শনি আর রবিবার টিভির সামনে বসে থাকা। আর সিনেমায় কোন মারামারির দৃশ্য হলেই “বাবু শিগগিরি আসুন” বলে ওনাকে ডাকা। অসিত বাবুও নাকি চাকরের ডাক শুনে লেখা টেখা সব ছেড়ে দৌড়ে টিভির সামনে চলে আসতেন।

সম্প্রতি এ বি পি আনন্দ চ্যানেলে তাপস পালের  জ্বালাময়ী বক্তৃতা বার বার দেখাচ্ছিল, তা দেখতে দেখতে আমার অসিতবাবুর কথা মনে পড়ছিল। একথা অস্বীকার করবোনা যে বার বার টেলিভিশনে ওই দৃশ্য দেখতে আমার মন্দ লাগতোনা, বেশ গা গরম হয়ে উঠতো। মনে হতো কোন সিনেমাই দেখছি, যেখানে নায়ক তার শত্রুদের বেশ এক হাত নিচ্ছে।

আর তাপস পাল তো অভিনেতাই, তাঁকে ঠিক রাজনৈতিক নেতা বলে কি মনে হয়? সুতরাং ওই দৃশ্য দেখে মনে হওয়া স্বাভাবিক যে তিনি অন্যের তৈরী করা স্ক্রিপ্ট বলে যাচ্ছেন এবং তাঁর ওই আগুণে বক্তৃতা আদতে অভিনয় ছাড়া আর কিছুই নয়।

দাদার কীর্ত্তি সিনেমার সেই বোকা ভালোমানুষ ছেলেটার কি হলো? মা সরস্বতী কে সে যে সারা রাত ঠান্ডা জলে গা ডুবিয়ে বলেছিল “মা, আমায় বোধ দাও মা, আমায় বুদ্ধি দাও”, সেই প্রার্থনায় কোন কাজ হয়নি দেখা যাচ্ছে।

এদিকে অফিস থেকে ফিরে রোজ এ বি পি আনন্দ খুলে ওই এক দৃশ্য দেখছি বলে সুভদ্রার “সারেগামা” কিংবা “তুমি যে আমার” দেখা হচ্ছেনা, সে একদিন বন্ধুদের কাছে আমার নামে complain  করে বলছিল “দ্যাখো না, এই এক হয়েছে তাপস পাল। এর জ্বালায় আমার কোন সিরিয়াল দেখা হচ্ছেনা।”সেদিন প্রসূণের বাড়িতে বন্ধুরা সবাই মিলে বসে World Cup এর  France Germany ম্যাচ টা দেখছি, হাফ টাইমে আমি প্রসূণ কে বললাম “একটু তাপস পাল টা চালিয়ে দাও তো, দেখি কি হচ্ছে।”

আমি আসলে বলতে চাইছিলাম এ বি পি আনন্দটা চালিয়ে দাও, কিন্তু মুখ ফস্কে বেরিয়ে গেল তাপস পাল। তার পর থেকে বন্ধুদের মধ্যে ওই কথাটাই চালু হয়ে গেছে।

বেশ কিছুদিন পরে একদিন শুনি প্রসূণ দেবাশীষ কে বলছে “এই দ্যাখো তো আমার বাড়িতে তাপস পাল আসছেনা কেন?” তার উত্তরে দেবাশীষ বললো, “আমি কি করে জানবো কেন আসছেনা? আমার বাড়িতে তো তাপস পাল রোজ আসে।”

কোন বাইরের লোক এই সব সাংকেতিক কথাবার্ত্তা শুনলে কি ভাববে কে জানে?