ভালোকাকার হিন্দী

মনোহরপুকুরের বাড়িতে আমাদের ছোটবেলায় কোন ফোন ছিলনা। চাইলেও তখন ফোনের লাইন পাওয়া যেতোনা। Calcutta Telephones এ apply  করে লাইন পেতে বছর দশেক অপেক্ষা করতে হতো। কিংবা তারও বেশী।  

সেই সময় ফোন থাকতো বনেদী বড়লোকদের বাড়িতে, কিছুটা Status symbol এর মতো। তেমন কোন emergency  হলে আমরা রাস্তার উল্টোদিকে হাঁদুবাবুদের বাড়িতে যেতাম ফোন করতে। আর মাঝে মাঝে ওই বাড়ি থেকে হাঁক পাড়তেন কেউ, “তোমাদের ফোন!”

আজকে এই সবার হাতে সেলফোন থাকার যুগে এক কালে ফোন ছাড়া কি করে আমরা জীবন কাটিয়েছি ভাবলে বেশ অবাক ই লাগে।      

আশির দশকে অজিত হালদার নামে একজন ডাক্তার আমাদের নীচের বাড়িতে ভাড়া থাকার সময় একটা ফোনের লাইন এর বন্দোবস্ত করেছিলেন। ডাক্তার হিসেবে হয়তো উনি হয়তো priority পেয়ে থাকবেন। যাই হোক, ওঁরা চলে যাবার পর ওই লাইনটা থাকায় ভালোকাকা একটা ফোনের কানেকশন পেয়ে যান। তার পর থেকে আমরা ফোন করতে হলে নীচের বাড়ি থেকেই করতাম।

কুয়েত থেকে সপ্তাহে একদিন মাকে ফোন করতাম। চৈতী নীচ থেকে মা’কে চেঁচিয়ে ডাকতো, “সেজমা, মান্টুদার ফোন!” কিছুক্ষণ ফোন ধরে অপেক্ষা করতে হতো, তারপর মা নীচে নেমে এসে ফোন ধরতেন।

মাঝে মাঝে চৈতী বা ভালোকাকীমা না থাকলে ভালোকাকা এসে ফোন ধরতেন। আর ধরেই কেন জানিনা হিন্দীতে কথা শুরু করে দিতেন।

“কৌন বোল রহেঁ হ্যায়?” কিংবা, “কিসকো চাহিয়ে?” ইত্যাদি।

ভালোকাকার কাছে ব্যবসা সূত্রে অনেক অবাঙ্গালী লোকের ফোন আসতো বোধ হয়। তাছাড়া টিভি তে অনবরত হিন্দী সিরিয়াল আর হিন্দি ছবি দেখার ও প্রভাব একটা ছিল হয়তো।

ভালোকাকার হিন্দী শুনে আমি বেশ বিব্রত বোধ করতাম মনে আছে। লাইন ও বেশীর ভাগ দিন বেশ খারাপ থাকত, বার বার “ভালোকাকা, আমি মান্টু” বললেও ভালোকাকা আমার কথা না শুনতে পেয়ে কেবল “কৌন?” “কৌন?” বলে যেতেন।

দুচ্ছাই বলে মাঝে মাঝে বেশ ব্যগ্র ইচ্ছে হতো বলি, “ভালোকাকা, ম্যায় মান্টু, কুয়েত সে ফোন কর রহা হুঁ, মাজী কো যরা বুলা দিজিয়েগা?”

বলিনি অবশ্য কোনদিন।