ইদানীং আমাদের দেশে বাংলায় কথা বললে বাংলার বাইরে বাঙালীদের হেনস্থার কথা শোনা যাচ্ছে। নীচের এই গল্পটা তাই নিয়ে, যদিও এটা অনেক দিন আগের কথা, তখন দেশে বাঙালীদের এত হেনস্থা হতোনা।
মাধবকাকা ছিলেন আমাদের বাবা কাকাদের পিসতুতো ভাই। তাঁর মা অর্থাৎ আমাদের বাবাদের পিসীমা ছিলেন দাদুদের একমাত্র এবং সবচেয়ে ছোট বোন, এবং তাই তাঁর দাদাদের খুব আদরের। তাঁর বিয়ে হয় কলকাতার কাছে উত্তরপাড়ার লাহিড়ী পরিবারে। তাঁর সন্তানদের মধ্যে মাধবকাকা – মেজ ছেলে – কোন কারণে আমাদের পরিবারের খুব কাছের মানুষ হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর হাসিখুশী সুন্দর স্বভাবের জন্যে বাবা কাকারা এবং মা কাকীমারা সবাই মাধবকাকাকে খুব স্নেহ করতেন।
মাধবকাকা আমাদের পরিবারের সকলের খুব প্রিয় একজন মানুষ ছিলেন। এই গল্পটা তাঁকে নিয়ে। তবে এর কতটা সত্যি আর কতটা বানানো, আমি জানিনা।
————————–
মাধব কাকা দিল্লী বেড়াতে এসে তাঁর মামাতো দাদা আমাদের নিখিল জ্যেঠুর Green Park Extension এর বাড়ীতে উঠেছেন। নিখিল জ্যেঠুর স্ত্রীর নাম শুভা, আমরা ছোটরা তাঁকে শুমা বলে ডাকি।
দিল্লী শহরে কত কি দেখার আছে, কুতুব মিনার, লাল কেল্লা, জামা মসজিদ। এই সব জায়াগা গুলো ভাল করে দেখার জন্যে মাধবকাকা একাই রোজ সকাল সকাল বেরিয়ে পড়েন, সন্ধ্যায় ফেরেন।
একদিন সকালে মাধবকাকা বাইরে বেরোবেন, এমন সময় শুমা বল্লেন “মাধব ঠাকুরপো, আপনার জামার দু’টো বোতাম খুলে গেছে দেখছি, আপনি আজ ফেরার সময় দোকান থেকে একটু সুতো কিনে আনবেন তো, আপনার জামার ওই বোতাম দু’টো আমি সেলাই করে দেবো।”
এ দিকে হয়েছে কি, মাধবকাকা হিন্দী টা ভালো জানেন না। সুতোর হিন্দী কি? মাধবকাকা র কেবল মনে পড়ছে “রসসি”! কিন্তু রসসি মানে তো দড়ি? একটা দোকানে ঢুকে মাধবকাকা জিজ্ঞেস করলেন “রসসি হ্যায়, রসসি?” তারপর আর একটু ভালো করে বোঝাবার জন্যে বল্লেন “পাতলা রসসি, সেলাই করনে কে লিয়ে!”
দোকানদার এর মাথায় কিছুই ঢুকলোনা।
তারপর আর একটা দোকান। মাধবকাকা ভাবলেন সংস্কৃত টা হিন্দীর কাছাকাছি, হয়তো “রজ্জু” বললে বোঝানো যাবে। দোকানদার যদি উপনিষদ পড়ে থাকে তাহলে “রজ্জুতে সর্পভ্রম” কথাটা জানে নিশ্চয়। মাধবকাকা সেখানেও অনেক কষ্ট করে বোঝাবার চেষ্টা করলেন। “সেলাই করনে কে লিয়ে পাতলা সরু রজ্জু হ্যায় ?” কিন্তু দোকানদার দের সংস্কৃত জানা নেই, উপনিষদ পড়া তো দূরের কথা।
দোকানে দোকানে ঘুরে ব্যর্থমনোরথ ক্লান্ত মাধবকাকা শেষে একটা দোকানে ঢুকে ভাবলেন নাঃ, বাংলাতেই চেষ্টা করা যাক। সুতো কথাটা যতোটা পারা যায় হিন্দী তে উচ্চারণ করে মাধবকাকা দোকানদার কে বললেন “সুতা হ্যায়,সুতা?”
দোকানদার ভদ্রলোক একটু হেসে পরিস্কার বাংলায় বললেন “দাদা, আপনি সুতো চান তো? বাংলা তে ই বলুন না,আমরা এখানে সবাই তো বাঙালী”।