
মুকুদের Army Officers Golf Club এ চারিদিকে অবারিত আদিগন্ত সবুজ গলফ কোর্স । খোলা আকাশের নীচে ক্লাবের outdoor restaurant, চারিপাশে অনেক গাছপালা, তাদের পাতার মাঝখান দিয়ে ঝিলিমিলি রোদ্দুর, মরশুমী ফুলের বাগান। সেই রেস্টুরেন্টের নিরিবিলি কোণ বেছে নিয়ে একটা টেবিলে আমরা দুজনে বীয়ার নিয়ে মুখোমুখি বসে আড্ডা মারি। শীতের সকাল, নরম সোনালী রোদ, পরিবেশটা খুব সুন্দর, আমি আমার মনের মধ্যে বেশ একটা ফুরফুরে আনন্দের ভাব টের পাই।
মুকুদের ক্লাবের চারিদিকে সাদা উর্দ্দি পরা মাথায় পাগড়ী পরা অধস্তন কর্ম্মচারীরা কাজ করছে, কেউ রিসেপশন কাউন্টারে, কেউ রেস্টুরেন্টের ওয়েটার, কেউ আবার মালী। Army তে rank ব্যাপারটা খুব important, তাই Army officer দের তুলনায় এই সব কর্ম্মচারীরা একটু নীচের তলার লোক।
উত্তর ভারতে হিন্দী belt এর প্রদেশ গুলোতে “বেটা” কথাটা নিজের ছেলেমেয়েদের অথবা ছোটদের ভালবেসে বলা হয়।
হাঁ বেটা, নেহী বেটা, উধর যাও বেটা, ইধর আও বেটা ইত্যাদি।
আমি দেখলাম মুকু অক্লেশে এই সব উর্দ্দী পরা মাঝবয়েসী এমন কি বেশ বুড়ো ওয়েটারদেরও আদর করে “বেটা” বলে সম্বোধন করছে, এবং তার কাছ থেকে এই পুত্রসদৃশ স্নেহের ব্যবহার পেয়ে তাদেরও কোন ভাবান্তর লক্ষ্য করা যাচ্ছেনা। অফিসারদের কাছ থেকে এই অপত্যস্নেহ পাওয়া তাদের কাছে নতুন কিছু নয়, এতে তারা বেশ অভ্যস্ত বলেই মনে হয়।
এই নিয়ে মুকুর একটা গল্প আছে।
—————-
মুকুর মেয়ে মণিকা Institute of Mass Communication এ admission পেয়েছে, এখানে admission পাওয়া সোজা নয়, খুব কম লোকেই পায়। মুকু তার সাথে ব্যাঙ্কে গেছে admission fee pay করতে। সেখানে গিয়ে দেখে বিশাল লম্বা লাইন। অন্ততঃ ঘন্টা দুয়েক লেগে যাবে লাইনের সামনে পৌঁছতে।
মুকু মণিকা কে বলল, “থাক্ তোর আর এখানে ভর্ত্তি হতে হবেনা, তুই বরং বরোদাতে গিয়ে Art History নিয়ে MA পড়তে যা, সেখানে এরকম লাইন দেবার ব্যাপার নেই, আমি টাকাটা ব্যাঙ্ক ট্র্যান্সফার করে দেবো।”
এই সব কথা হচ্ছে, এমন সময় একটি উর্দ্দি পরা ব্যাঙ্কের দারোয়ান এসে মুকু কে বললো “সাব্, আমায় চেক লিখে দিন্, আমি আপনার টাকা জমা দিয়ে রিসিট এনে দিচ্ছি”।
আমি মুকু কে বললাম, “কে লোকটা?”
মুকু বললো, “শোন্ না! আমি তো চেক লিখে দিলাম, ভাবলাম account payee cheque, কি আর করবে? দেখাই যাক না”।
মিনিট দশেক পরে লোকটা এসে মুকুকে টাকার রিসিট দিয়ে একটু দুঃখ দুঃখ মুখ করে বললো, “আপ মেরেকো পহচানা নেহী, সাব্?”
মুকু অফিসার সুলভ পুত্রস্নেহে বিগলিত হয়ে লোকটাকে বললো “নেহী বেটা, ম্যায় পহচানা নেহি, কৌন হ্যায় তুম্?”
লোকটা বললো, “ম্যায় ভরতপুর মে আপকা আর্দালী থা”, তার পর মণিকাকে দেখিয়ে, “বেবী কো ম্যায় হী সাইকেল চালানা সিখায়া…”
————–
বীয়ার নিয়ে দুজনে আরাম করে বসে গল্প করছি, এই সময় এই সুন্দর বাগান কে ব্যাকগ্রাউন্ড করে আমাদের একটা ছবি তোলা যায়না?
আমি মুকু কে বললাম কাউকে একটু বল্ না আমাদের একটা ছবি তুলে দেবে।
দূর থেকে একজন বেশ প্রৌঢ় ওয়েটার আসছিল, তার মাথা ভরা পাকা চুল, সাথে আবার বেশ বাহারী সাদা ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি।
সব্বোনাশ, মুকু কি এই বুড়ো লোকটাকেও “বেটা” বলে ডাকবে নাকি?
যা ভেবেছি তাই।
মুকু ওই ফ্রেঞ্চকাট লোকটাকে ডেকে বললো, “বেটা, ইধার আও!”
লোকটা কাছে এসে বশংবদের মত এসে দাঁড়িয়ে বললো, “জী সাব্!”
মুকু তাকে স্নেহমিশ্রিত স্বরে বললো, “হমারে এক ফোটো খিঁচ দো বেটা…”