মধ্যবিত্তের উইম্বলডন, ২০১৯

আমার বাবা আমায় স্কুলে থাকতে কলকাতায়  সাউথ  ক্লাবে BLTA (Bengla Lawn tennis Association)  এর টেনিস কোচিং ক্লাসে ভর্ত্তি করে দিয়েছিলেন।  সেখানে আমাদের খেলা শেখাতেন নরেশ কুমার আর আখতার আলি।  পাশের কোর্টে প্র্যাক্টিস করতে দেখতাম জয়দীপ মুখার্জ্জি আর প্রেমজিৎ লালকে।  সেই ১৯৬০ সালে তারা ভারতের দুই জন ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন।

টেনিস এর প্রতি আমার মনে আকর্ষণ আর  ভালবাসা জন্মায় সেই সময় থেকেই।  বাবা নিজে খুব ভাল টেনিস খেলতেন  সাউথ ক্লাবে মেম্বার ছিলেন, ওখানকার অনেকের সাথেই ওঁর ভাল আলাপ ছিল।  সুমন্ত মিশ্র, অধীপ মুখার্জ্জী, হরিগোপাল দাশগুপ্ত দের সাথে  প্রায়ই ক্লাবে বসে গল্প আর হাসি ঠাট্টা করতেন।  তাছাড়া কাস্টমস ক্লাবে প্রতি রবিবার গিয়ে ওখানকার সবুজ লনে বন্ধুদের সাথে টেনিস খেলতেন।  আমি কিছুটা টেনিস খেলতে শেখার পরে আমায় নিয়েও খেলেছেন।

আমাদের স্কুল জীবনে তো টিভি ছিলনা, BBC রেডিও ও পেতাম না। টেনিস এর খবর কাগজ পড়েই follow করতাম। রড লেভার, কেন রোজওয়াল, রয় ইমারসন, আমাদের রমানাথন কৃষ্ণণ। কে জিতলো কে হারলো সব খবর ছিল আমার নখদর্পণে। 

এক বন্ধুর বাড়ীতে কালার টিভি তে প্রথম উইম্বল্ডন ফাইনাল দেখি সত্তরের দশকে। ম্যাকেনরো আর বর্গ। সেই সবুজ ঘাস, সেই সাদা পোষাকের খেলোয়াড়রা, সেই পরিবেশ, দেখে একেবারে মজে গিয়েছিলাম। তারপরে কত বছর কেটে গেছে, টি ভি তে উইম্বল্ডন ম্যাচ দেখা পারলে miss করিনি কখনো।

এতবার লন্ডন গেছি, কিন্তু  উইম্বলডনের All England Lawn Tennis Club (AELTC) Ground এ কোনদিন খেলা দেখতে যাওয়া হয়নি। 

এবছর আমার সেই আক্ষেপটা মিটলো।

আমার মেয়ে লটারীর টিকিট পেয়েছিল, সেন্টার কোর্টে দ্বিতীয় দিন। সেদিন সেখানে খেললো এঞ্জেলিকা কার্ব্বার, রজার ফেডারার আর সেরেনা উইলিয়ামস। একটার সময় খেলা শুরু, হিসেব করে দেখা গেল বাড়ী থেকে ক্লাবে পৌঁছতে ঘন্টা খানেক  লাগবে।

বেলা দশটা নাগাদ ধীরেসুস্থে বেরোলাম। বাড়ীর কাছে Central line টিউব স্টেশন South Woodford, সেখান থেকে Stratford গিয়ে লাইন চেঞ্জ করে জুবিলী লাইন ধরে ওয়াটারলু স্টেশন। তারপর overland  ট্রেণ ধরে উইম্বলডন। এখানে ঘড়ির কাঁটা ধরে ট্রেণ চলে, অতএব গন্তব্যে পৌঁছতে লাগলো ঠিক পঞ্চাশ মিনিট।  সুন্দর আবহাওয়া এখন, বাইশ ডিগ্রী সেলশিয়াস। নীল আকাশ, সোনালী রোদ।

স্টেশনের বাইরে চারিদিকে অনেক বুথ, সেখানে ব্যাজ পরা volunteer রা সাহায্য করার জন্যে প্রস্তুত, তাদের কারুর হাতে  tournament schedule, কারুর হাতে map, আর সবার মুখে  হাসি। 

স্টেশন থেকে  All England Lawn Tennis Club (AELTC) Ground পর্য্যন্ত হেঁটে যেতে বেশ কিছুটা সময় লাগবে, সামনেই ট্যাক্সির জন্যে লম্বা লাইন, সেখানে দাঁড়িয়ে গেলাম। গাড়ীতে পাঁচজনের সীট, আড়াই পাউন্ড এক এক জনের।  মিনিট পাঁচেকের মধ্যে ট্যাক্সি পেয়ে গেলাম।   

স্টেশন  থেকে বাইরে বেরিয়ে গাড়ীর জানলা দিয়ে উইম্বলডন শহর টা কে বেশ বর্ধিষ্ণু বলে মনে হলো। রাস্তার পাশে সাজানো গোছানো দোকানপাট, বুটিক, সেলন, রেস্টুরেন্ট।, কালো ট্যাক্সি আর লাল  দোতলা বাস চলে যাচ্ছে রাস্তা দিয়ে।  Tournament চলছে বলেই বোধ হয় রাস্তায় অনেক মানুষের ভীড় । 

প্রথম দর্শনে উইম্বলডন শহর কে বেশ ভালোই লাগলো।

Club ground এ বারোটার মধ্যে পোঁছে গেলাম। ক্লাবের অনেক গুলো গেট। আমাদের গেট নাম্বার ১৩। অন্য এক গেটের সামনে দেখি বিরাট লাইন। সেটা হলো যাদের টিকিট নেই তাদের জন্যে। সকাল সকাল গেলে টিকিট পাওয়া যায় ছোট ছোট কোর্টের। একশো পাউন্ডের  এর কাছাকাছি দাম। তাছাড়া পঁচিশ পাউন্ডে শুধু ভেতরে ঢোকার টিকিট ও আছে। Henman Hill এর সবুজ ঘাসে বসে বড় স্ক্রীনে ভাল খেলা দেখার সাথে সাথে  family আর বন্ধুবান্ধব কে নিয়ে একটা পিকনিক ও হয়ে যায়।  

আর বেলা যত এগোয় তত যারা খেলা দেখে চলে যায় তাদের টিকিট তারা ক্লাব কে দিয়ে যেতে পারে। সেই  used ticket এর জন্যেও আলাদা কাউন্টার আছে।  তার দাম  পাঁচ পাউন্ড। 

Security check এর পরে তেরো নম্বর গেট দিয়ে  ঢুকে প্রথমেই চোখে পড়ে জনসমুদ্র। 

এত লোক?

সব কোর্ট মিলিয়ে শুনেছি এখানকার capacity বড় জোর চল্লিশ হাজার, Wembley বা আমাদের Eden Gardens এর তুলনায় কিছুই না। এদের মধ্যে একটা বড় অংশের কোর্টে যাবার টিকিট নেই, তারা এসেছে  সেখানকার উৎসবের পরিবেশটা উপভোগ করতে। প্রত্যেকে খুব সাজগোজ করে এসেছে, ছেলেদের মাথায় ফেল্টের হ্যাট, হাতে চুরুট, মেয়েদের চোখে বাহারী  সানগ্লাস। 

ভীড়ের আর একটা কারণ ক্লাবের ভিতরে হাঁটার রাস্তা বেশী চওড়া নয় , কোর্ট গুলো অনেক জায়গা নিয়ে নিয়েছে। 

আমরা কিছুক্ষণ ঘুরে ঘুরে জায়গাটার সাথে পরিচিত হলাম। বিশাল সেন্টার কোর্ট, তার সামনে ফ্রেড পেরীর স্ট্যাচু। আমার মতো যারা টেনিস খেলেছে বা টেনিস খেলাটা কে ভালোবাসে, তাদের কাছে উইম্বলডন হলো একটি তীর্থক্ষেত্র। তাদের কাছে এই জায়গার aura ই আলাদা। বেশ বিহবল বোধ করছিলাম মনে মনে।    

সামনেই  শ্যাম্পেন,  Pimms, Strawberry and cream, Pizza ইত্যাদির স্টল, সেখানে লম্বা লাইন।  আমরা সেন্টার কোর্টের গেট সন্ধান করে জেনে নিয়ে কিছু ছবি তুলে লাইনে দাঁড়িয়ে স্যান্ডউইচ আর শ্যাম্পেন কিনে এক জায়গায় বসে খেয়ে নিলাম।

একটা বাজতে আর পনেরো মিনিট বাকি। এবার সীটে গিয়ে বসার সময় হয়েছে।

সেন্টার কোর্টের একদম ওপরে আমাদের সীট। গেট ৫১১। পাঁচ তলায়। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে দম বেরিয়ে গেল। বেশ সরু প্যাসেজ আর তুমুল ভীড়। ব্যাজ পরা Volunteer আর Security র লোকেরা চারিদিকে দাঁড়িয়ে।

৫১১ তে পোঁছে গেট দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়লো নীচে বহু নীচে সবুজ ঘাসের গালিচা পাতা কোর্ট, আর দর্শকে ঠাসা  কোর্টের চারিদিক।  ছাদ এর Cover খোলা, তাই রোদ এসে ভরিয়ে দিয়েছে সবুজ ঘাসের কোর্ট আর গ্যালারী। 

অত ওপর থেকে বেশ লাগছিলো। Bird’s eye view যাকে বলে।

খেলা শুরু হলো কাঁটায় কাঁটায় একটায়, গত বছরের চ্যাম্পিয়ন Angelique Kerber আর Tatjana Maria নামে একজন অচেনা মেয়ের, দু’জনেই জার্মান। টি ভি তে যেরকম দেখি সবই একরকম, কেবল খুব ওপর থেকে দেখা বলে অন্যরকম লাগছে।

চারিদিক তাকিয়ে দেখছি এমন সময় হঠাৎ হাততালির শব্দ!

কি ব্যাপার?

দেখি দুজন প্লেয়ার মাঠে ঢুকছে, দর্শকরা প্রথা অনুযায়ী তাদের অভিবাদন জানাচ্ছে।  তারপরে টস আর কিছুক্ষণ প্র্যাকটিস। আম্পায়ার “টাইম” বলার পরে ম্যাচ শুরু।

সারা জীবন এতগুলো বছর  High Definition large screen colour TV তে টেনিস খেলা দেখেছি।  সেখানে ক্যামেরার গুণে  বাড়ীতে বসেই  মনে হয় যেন কোর্ট সাইডে বসে খেলা  দেখছি।   সেই যেরকম সাঊথ ক্লাবের কাঠের গ্যালারীতে বসে সামনা সামনি জয়দীপ প্রেমজিত এর প্র্যাক্টিস ম্যাচ বা বা ডেভিস কাপে রয় ইমারসন রমানাথন কৃষ্ণন এর খেলা দেখতাম।

সেই অভিজ্ঞতার সাথে এত ওপর থেকে খেলা দেখার মধ্যে অনেক তফাত। তার ওপর আমাদের বাইনোকুলার ও নেই। থাকলেও কত সুবিধে হতো কে জানে।

কিন্তু আমি নিজেকে বোঝালাম আমি তো খেলা দেখতে আসিনি, আমি এসেছি এখানকার পরিবেশ দেখতে, Wimbledon Centre Court এ যে একদিন এসে খেলা দেখেছি এটাই কি যথেষ্ট নয়? আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই কিছু আশা আকাঙ্খা থাকে, যা পূর্ণ না হলে মনের ভিতরে কেমন যেন একটা খেদ থেকে যায়।   

এখন এতদিন পরে আমি এখানে। আজ যদি খেলা টা ভাল ভাবে নাও দেখতে পারি, এখানকার এই পরিবেশটা চুটিয়ে উপভোগ করে নিই।

ফার্স্ট রাউন্ডের খেলা তো একপেশে one sided হবে জানাই কথা, সেদিন কার্বার আর সেরেনা দু’জনেই সহজে স্ট্রেট সেটে জিতলো। রজার কিছুটা অবাক করে ফার্স্ট সেটটা হেরে পরের তিন সেটে উড়িয়ে দিলো তার প্রথম রাউন্ডের প্রতিযোগীকে।

রজার ফেডারার কে এখন ঘাসের কোর্টের সর্ব্বকালের সর্ব্বশ্রেষ্ঠ টেনিস খেলোয়াড় বলা হয়, তার খেলা উইম্বলডন সেণ্টার কোর্টে বসে দেখছি ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল। চার সেট খেলার জন্যে রজারের শিল্পসুষমা ভরা খেলার অনেক নিদর্শন দেখলাম।

খেলার মাঝে মাঝে খেলোয়াড় দের বিশ্রামের সময় দর্শকরা উঠে চলাফেরা করতে পারে, কিন্তু খেলা চলার সময় gallery তে কোন movement চলবেনা। বাইরে করিডরে যাবার দরজা আটকে দু’জন প্রহরী দাঁড়িয়ে আছে, ঢোকা বেরনো দুটোই বারণ।আমি একবার বাথরুমে যাবো বলে বাইরে বেরিয়ে আটকে গেলাম, দুটো গেম খেলা শেষ হবার পরে প্রহরীরা ভেতরে ঢুকতে দিলো। আমার সাথে অবশ্য বাইরে বহু লোক ছিল, সবাই ভিতরে ঢুকবে।         

প্রতি খেলার পরে মিনিট পনেরো ব্রেক, তার মধ্যে বাইরে বেরিয়ে করিডর দিয়ে বেশ কিছুটা গিয়ে toilet আর refreshment shop। দুই জায়গাতেই বিশাল লম্বা লাইন। রজারের খেলা শুরু হবার আগে আমরা Elderberry drink আর উইম্বলডনের বিখ্যাত Strawberry and cream কিনে নিয়ে এলাম। এবছর শুনেছিলাম উইম্বলডনে স্ট্রবেরী বেশী আমদানী হয়নি, যাও বা পাওয়া গেছে তাও তেমন সুবিধের নয়। আমাদের তো একেবারেই ভাল লাগলোনা। জঘন্য টক। তবু হাসিমুখেই খেলাম।   

ফেডারার এর পরে সেদিনের শেষ ম্যাচ ছিল সেরেনার। সে প্রথম সেটটা জেতার পরে আমি সুভদ্রা আর পুপু কে বললাম তোমরা খেলা দ্যাখো, আমি একটু বাইরে বেরিয়ে জায়গাটা ঘুরে দেখে আসি।

টিকিটের সাথে Ticket holder’s guide নামে একটা booklet এসেছে, তাতে সব কিছু পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে লেখা, সেখানে সব কোর্টের ম্যাপ আঁকা আছে, সেই ম্যাপ দেখে দেখে ভীড়ের মধ্যে গা ভাসিয়ে ঘুরে বেড়ালাম কিছুক্ষণ। সব মিলিয়ে আঠেরোটা কোর্ট, তার মধ্যে সেন্টার কোর্ট আর এক নম্বর কোর্টের ছাদ আছে, তাদের মাঝখানে চৌদ্দ থেকে সতেরো নম্বর কোর্ট সেখানে সাধারণ কাঠের গ্যালারী। আমাদের সাউথ ক্লাবের মতই। সব কোর্টেই খেলা চলছে, তবে বাইরে থেকে খেলা দেখার উপায় নেই। ঘাসে বল বাউন্স করার অবিরাম শব্দ ভেসে আসছে বাতাসে। সব গ্যালারী ই লোকে ভর্ত্তি।

সতেরো নম্বর কোর্টের পরে হেনম্যান হিল, একটা সিঁড়ি উঠে গেছে তার পাশ দিয়ে। হেনম্যান হিলের সামনে বড় টিভিতে নাদালের খেলা দেখানো হচ্ছে, আর অন্য দিকে সিঁড়ির ওপাশে উঁচু আঠেরো নম্বর কোর্ট।সেই কোর্ট covered না হলেও অনেক উঁচু তে। এবং তার capacity ও বেশী।

হেনম্যান হিলে লোক গিজগিজ করছে, ঘাসের ওপরে বসে সবাই সামনে টিভিতে নাদালের খেলা দেখছে, একটা মেলার মত পরিবেশ। চারিদিকে লোকে লোকারণ্য। সবাই খুব সেজে গুজে এসেছে, বিশেষ করে মহিলাদের বেশভূষা দেখলে তাদের খুব upmarket বলে বোঝা যায়, উইম্বলডন হলো একটা বনেদী দের গার্ডেন পার্টি।  আমি গরীব মধ্যবিত্ত সেখানে খানিকটা হলেও বেমানান।

সুভদ্রা আর পুপু বেরিয়ে আসার পর তিন জনে মিলে Souvenir shopping সেরে গিয়ে একটা open air cafe তে গিয়ে কফি নিয়ে বসলাম। তখন খেলা সব প্রায় শেষ, অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে, তবু এত ভীড়, কফি শপে বসবার জায়গা পেতেই অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হল।

উইম্বল্ডনে খুব সবুজ রং এর আধিক্য, green environment নিয়ে AELTC অনেক কাজও করছে। কোর্ট গুলো তো সবই চোখ জোড়ানো সবুজ ঘাসের, তাছাড়া হেনম্যান হিল এও যেন ঘাসের গালিচা পাতা। গ্যালারীর স্ট্যান্ড সব গাঢ় সবুজ আর সেন্টার কোর্ট বিল্ডিং এর দেয়ালেও চারিদিকে সবুজ রং।এর আগে নাকি ঘাস দিয়েই দেয়াল ঢাকা থাকতো, কিন্তু গরমে ঘাস শুকিয়ে যায় তাই এখন artificial grass..আমার চোখে অবশ্য বেশ underwhelming লাগলো।

গেট থেকে যখন বেরোলাম তখন সন্ধ্যা নামছে। স্টেশনে যাবার ট্যাক্সি পাবার জন্যে বিশাল লম্বা লাইন। সেই লাইনে দাঁড়িয়ে আলাপ হয়ে গেল একটি ভারতীয় পরিবারের সাথে, স্বামী স্ত্রী, তারা আমেরিকা থেকে এসেছে। তবে টেনিসের থেকে ক্রিকেটেই তাদের উৎসাহ বেশী। এখন ইংল্যান্ডে Limited Over ক্রিকেটের World Cup এর খেলা চলছে। তারা ক্রিকেটের ভক্ত, একটা সেমি ফাইনালের টিকিট পেয়েছে। ভারত এবার জিতবে world cup জিতবে নিশ্চয়। কি বলেন?   

উইম্বলডনে টেনিস খেলা দেখতে এসে ক্রিকেট নিয়ে ওই দু’জনের সাথে আলোচনা করলাম ট্যাক্সি না আসা পর্য্যন্ত।  এই ক্রিকেট পাগলদের পাল্লায় পড়ে শেষটা একটু anti climax এর মত হয়ে গেল।     

সেবছর লর্ডসে পঞ্চাশ ওভার One day ক্রিকেট ফাইনাল আর উইম্বলডনে  পুরুষদের টেনিস ফাইনাল এই দুটো ম্যাচ এক দিনে প্রায় এক সাথে খেলা হয়েছিল। এবং দুটোই রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ।  ইংল্যান্ড ক্রিকেটে  হারিয়েছিল নিউজিল্যান্ডকে আর টেনিসে নোভাকের কাছে পাঁচ সেটের ম্যাচে হেরে গিয়েছিল রজার। দুটো ম্যাচেই  হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছিল, শেষে দুটোই টাই ব্রেক পর্য্যন্ত গড়ায়।  আমি বাড়ীতে বসে টিভি চ্যানেল ঘন ঘন পালটে সেই দুটো খেলাই  দেখেছি সেদিন। 

 তবে সত্যি বলতে কি উইম্বলডনে ওই পাঁচ তলার ওপর থেকে খেলা দেখার থেকে বাড়ীতে আরাম করে টিভির সামনে বসে খেলা দেখার কোন তুলনাই হয়না।  প্রথমতঃ সেখানে কোর্টের সামনের সীটে বসে খেলা দেখার টিকিটের দাম আমার ধরাছোঁয়ার বাইরে। ভাগ্যে লটারীর শিকে ছিঁড়লে যা বুঝলাম ওই ওপর থেকেই খেলা দেখতে হবে।  আর বাড়ীতে বসে টিভিতে High resolution ক্যামেরার সৌজন্যে আমি ওই সামনে বসে থাকা গ্যালারীর দর্শকদের থেকেও অনেক বেশী কাছ থেকে খেলা দেখছি বলে মনে হয়। খেলোয়াড়দের যেন হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যাবে, তাদের মুখের অভিব্যক্তি – ব্যর্থতার গ্লানি কিংবা সাফল্যের আনন্দ – স্পিনে বল কেমন ঘুরছে, ঘাসে বল পড়লে ধূলো উড়ছে, এই সব পরিস্কার দেখতে পাই।     

আমি আর উইম্বলডন যাচ্ছিনা। একবার গিয়ে দেখে নিলাম, ব্যাস, আমার বাকেট লিস্টে টিক্‌ পড়ে গেছে। ওই বিখ্যাত স্ট্রবেরী আর ক্রীম খাবার কোন ইচ্ছেও আমার আর নেই। বডড টক!

আমার জন্য নিজের ঘর আর টিভি ই ভালো।