এইচ টু ও

ইন্টারভিউ – হ্যান্ডশেক

এবং ইন্দ্রজিৎ নাটকে একটা চাকরীর ইন্টারভিউ এর সীন ছিল। তাতে এক এক করে  অমল বিমল কমল ইন্দ্রজিৎ রা  একটা ঘরে ইন্টারভিউ দিতে ঢুকছে। কিন্তু ওদের বের করে দেওয়া হচ্ছে অন্য দরজা দিয়ে।

কেন?

লেখক এর একটা সংলাপ আছে সেখানে সে বলছে  আসলে ওদের বেশী প্রশ্ন নেই তো, একই প্রশ্ন সবাইকে করছে, তাই ওরা চায়না যে বাইরে বেরিয়ে এসে কেউ তার প্রশ্নগুলো তার বন্ধুদের বলে দিক।

এই নিয়ে নীচের গল্প টা~

বেঙ্গল কেমিকাল কোম্পানী চীফ কেমিস্ট চেয়ে খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছে, তার উত্তরে হাজার হাজার  প্রার্থীর দরখাস্ত এসেছে।  যদিও  চাকরীর জন্যে কেমিস্ট্রী  তে মাস্টার্স ডিগ্রী যথেষ্ট বলা হয়েছে , কিন্তু প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই  ডক্টরেট আর অনেকের আবার পোস্ট ডক্টরাল ডিগ্রী!   

ইন্টারভিউ এর দিন প্রচন্ড ভীড়, যাকে বলে লোকে লোকারণ্য, অনেকটা সত্যজিৎ রায়ের “প্রতিদ্বন্দ্বী” ছবির সেই ইন্টারভিউ এর সীনটার মত।

দুই বন্ধু এসেছে ইন্টারভিউ দিতে। তাদের মধ্যে একজন খুব সাজগোজ করে এসেছে, স্যুট টাই, পায়ে চকচকে পালিশ করা জুতো। সে ভেবেছে এখানে যারা এসেছে সবারই তো দরকারী শিক্ষাগত যোগ্যতা আছে, সে ব্যাপারে কেউ কাউকে বেশী টেক্কা দিতে পারবেনা, যদি ভাল সেজেগুজে এলে একটু চোখে পড়া যায়!

বেঙ্গল কেমিকাল কোম্পানীর চীফ কেমিস্ট বলে কথা, সে তো কোম্পানীর একজন বড়সাহেব,   তাকে স্যুট টাই না পরলে মানাবে কেন?

একটু সকাল সকালই তার ডাক পড়লো। যাঁরা ইন্টারভিউ নিচ্ছিলেন, তাঁরা তার ফিটফাট চেহারা আর সাজগোজ দেখে  বেশ চমৎকৃত, তাঁদের মধ্যে  একজন জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার জুতোটা তো খুব ভাল পালিশ করেছো, আয়নার মত চকচক করছে!”

যদিও সে একটু আগে রাস্তার মোড়ে জুতো পালিশওয়ালার কাছে জুতো পালিশ করিয়ে এসেছে, তবু তার মনে হল সে কথা বললে তার কিছু নম্বর কাটা যেতে পারে। এঁরা ভাববেন যে নিজের জুতো নিজে পালিশ করেনা সে কি করে চীফ কেমিস্টের  এর দায়িত্ব সামলাবে?

সে একটু রেলা নিয়ে বললো “আমি নিজেই পালিশ করেছি স্যার~”

“কি দিয়ে পালিশ করলে?” জিজ্ঞেস করলেন আর একজন, একটু মজা করেই। এত প্রার্থী কে রুটিন একঘেয়ে প্রশ্ন করতে করতে মাঝে মাঝে একটু অন্যরকম প্রশ্ন করতে ভালই লাগে।

কি দিয়ে?

প্রশ্নটা শুনে একটু ঘাবড়ে গিয়ে পরে সামলে নিয়ে ছেলেটি বললো, “চেরী ব্লসম বুটপালিশ দিয়ে স্যার!”

“চেরী ব্লসম, হুম!” বললেন পরীক্ষক, “আচ্ছা, তুমি বুট পালিশের কেমিকাল ফর্মূলা জানো?”

সব্বোনাশ! এটা তো জানা নেই! বেচারা চুপ করে রইলো। সে যে এই ফ্যাসাদে পড়বে কে জানতো?

“বেঙ্গল কেমিকাল কোম্পানী এখন বুট পালিশ তৈরী করেনা ঠিকই, কিন্তু ভবিষ্যতে তো করতেই পারি আমরা। তাই না? তাহলে আমাদের  ভবিষ্যৎ চীফ কেমিস্ট হিসেবে আমরা তো আশা করতে পারি যে তুমি অন্ততঃ আমাদের  ভবিষ্যৎ কার্য্যকলাপ সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল হবে। ”

ইন্টারভিউ এর শেষে সে বাইরে বেরিয়ে আসতেই তাকে ছেঁকে ধরলো সবাই। “কি জিজ্ঞেস করছে একটু বলুন না প্লীজ?”  

ইন্টারভিউ

কাউকে নিজের বেইজ্জতের কথা না বললেও তার বন্ধু তার মুখ দেখেই বুঝেছে যে কোন একটা গন্ডগোল হয়েছে। সব শুনে বন্ধুটি বলল “আমায় তোর জুতোটা দে তো, আমি তোর জুতো পরে ইন্টারভিউ দেবো।”

“তুই আমার জুতো পরবি? তোর তো দু সাইজ ছোট হবে~”

“দে না, আমি ঠিক পরে নেবো, ভাবিস না!”

তারপর অনেকটা সময় কেটে গেছে, দিন প্রায় শেষ, বন্ধুটির যখন ডাক পড়ল, তখন বাইরে আর মাত্র কয়েকজন প্রার্থী বাকি। ভেতরে পরীক্ষকরাও ক্লান্ত, বিধ্বস্ত।

দুই সাইজ ছোট জুতো পরে ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে ঘরে ঢুকে ছেলেটি পরীক্ষক দের সামনে  “গুড আফটারনুন স্যার!” বলে দাঁড়িয়ে রইলো, চেয়ারে আর বসেনা।

“কি হলো, বসুন!” পরীক্ষকরা বেশ বিরক্ত।

“আমার জুতো স্যার!”, বিগলিত হেসে নিজের পায়ের জুতোর দিকে ইঙ্গিত করে দেখালো সে।

“কি হয়েছে তোমার জুতোর?” পরীক্ষকরা কিছুটা হতভম্ব, তাঁদের সহ্যের সীমা ক্রমশঃ ছাড়াচ্ছে।

“আমি আমার জুতো নিজেই পালিশ করেছি স্যার!”

“So what?” এবার চিৎকার করে ধমক দিয়ে উঠলেন এক পরীক্ষক।

“আমি আমার জুতো জল দিয়ে পালিশ করেছি স্যার!” বললো ছেলেটি।

তার পরে একগাল হেসে, “আর জলের কেমিকাল ফর্মূলা হলো  এইচ টু ও স্যার!”

———

বন্ধুটির সেই চাকরীটা শেষ পর্য্যন্ত হয়েছিল কিনা তা জানা নেই।

বাইরে বসে বাকি প্রার্থীদের সম্ভাব্য প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা

2 thoughts on “এইচ টু ও

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে।