কয়েক বছর আগে আগে USA র বিরুদ্ধে কোপা সেমিফাইনালে তিরিশ গজ দূর থেকে মেসির ফ্রিকিক এ দুর্দ্ধর্ষ গোল দেখার পর মেসি কে সবাই দেবতা ভেবে আকাশে তুলে নাচছিল। তার মাত্র কিছুদিন পরে স্প্যানিশ লীগের ম্যাচে বার্সিলোনার হয়ে খেলার সময় পেনাল্টি মিসের পর বেচারার মুখটা দেখে দুঃখই হচ্ছিল। কাল কাগজে তাকে নিয়ে কি লেখা হবে কে জানে।
আকাশ থেকে সোজা মাটিতে। দেবতা থেকে আবার একজন সাধারণ মানুষ?
সালা হুইমসিকাল পাব্লিক!
গত বছর (২০২২) কাতারের বিশ্বকাপে অনেক পেনাল্টি মিস দেখলাম । ফুল টাইমের মধ্যে খেলার মীমাংসা না হলে পেনাল্টি শুটআউটে জয় পরাজয় ঠিক হয়, অনেক সময় কোন টীম ১২০ মিনিট ভাল খেলেও পেনাল্টি মিসের জন্যে হেরে গেলে বেশ খারাপ লাগে। কাতারে আর্জেন্টিনা আর ফ্রান্সের ফাইনালে যা হলো। স্বস্তির কথা সেখানে অবশ্য মেসি বা এমব্যাপে দুজনেই পেনল্টি মিস করেনি।
কিন্তু ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপের ফাইনালে পেনাল্টি শুটআউটে ইটালী ব্রাজিলের কাছে হারে। ইটালীর নামী ফরোয়ার্ড বাজিও সেবার পেনাল্টি মিস করে। তার পর মাঠে বেচারার দু’হাতে মুখ ঢেকে কান্নার ছবি এখনো আমার চোখে ভাসে।
দেশের হয়ে খেলার সময় এই সব নামী দামী খেলোয়াড়দের মনের ওপরে কি ধরণের expectation এর চাপ থাকে তা আমাদের পক্ষে অনুমান করাও কঠিন।
সুতরাং পেনাল্টি মিস হলে অবাক হবার তেমন কিছু নেই। হতেই পারে। মেসি রোনাল্ডো এবং আরও অনেক নামকরা খেলোয়াড় বহু বার পেনাল্টি মিস করেছে, ওই ম্যাচটাতে মেসিরও সেটা প্রথম পেনাল্টি মিস ছিলনা!
২০০৬ সালে জার্মানীর বিশ্বকাপ Quarter Final এ পর্তুগালের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ড এর বেকহ্যাম, জেরার্ড আর ল্যাম্পার্ড তিন জনেই পেনাল্টি মিস করে, এবং ইংল্যান্ড হেরে যায়। সেই সময়ে ইংল্যান্ডে Immigrant দের জন্যে Britishness course চালু করা হয়েছিল। যাতে তাদের মধ্যে ব্রিটিশদের মূল্যবোধ চারিত হয় আর তারা ভাল ভাবে ব্রিটিশ সমাজে মিশে যেতে পারে।
তো তার পরের দিন গার্ডিয়ানে একটা কার্টুন বেরিয়েছিল, তাতে দেখা যাচ্ছে আলখাল্লা আর পাগড়ী পরা এক মুখ দাড়িওয়ালা তিন জন লোক এরকম একটা Britishness course এর ক্যাম্প থেকে হাসিমুখে বেরিয়ে আসছে,তাদের একজন রিপোর্টার জিজ্ঞেস করছেঃWhat did you learn today?
উত্তরে তারা একগাল হেসে বলছেঃ Today we learnt how to miss penalty kicks…
ইংল্যান্ডের এই পেনাল্টি মিস করে ম্যাচ হারা এখন একটা রসিকতার পর্য্যায়ে চলে গেছে।
আমার বাবা (প্রাণবন্ধু, বাদল) তিরিশের দশকে কলকাতা ময়দানে ফার্স্ট ডিভিসনে ফুটবল খেলতেন। স্কটিশ চার্চ কলেজের হয়ে এলিয়ট শীল্ডে খেলার সময় তিনি এরিয়ানের দুখীরাম মজুমদারের নজরে পড়েন। দুখীরাম তাঁকে এরিয়ানে ডেকে নেন।
আমার মাসতুতো দাদা (বড়মাসীর ছেলে, রতন দা’) বাবার কাছ থেকে পাস নিয়ে ময়দানে খেলা দেখতে যেতেন। রতনদা’র কাছে শুনেছি, “উঃ, মেসোমশায়ের দুই পায়ে সে কি দুর্দ্দান্ত কিক!”
বাবা গল্প করতেন যে তিনি নাকি এমন কর্ণার কিক করতেন যে বল হামেশাই swerve করে সেকেণ্ড পোস্ট দিয়ে গোলে ঢুকে যেত। Bend it like Beckham এর মত। তখন অবশ্য বেকহ্যাম এর জন্ম হয়নি। কথাটা হওয়া উচিত ছিল Bend it like Bhowmick!
তাই যে কোন খেলায় কর্ণার বা পেনাল্টি অবধারিত বাবাই নিতেন।
একবার কোন এক ম্যাচে বাবা নাকি পেনাল্টি মিস্ করেন। বল বারের সামান্য দুই ইঞ্চি ওপর দিয়ে বেরিয়ে যায়।
পরের দিন স্টেটসম্যান কাগজে সেই ম্যাচ রিপোর্টের হেডলাইন ছিলঃ
BHOWMICK MISSES PENALTY KICK!
পড়লে মনে হবে সেটা যেন পৃথিবীর একটা অন্যতম আশ্চর্য্য ঘটনা~
এই হেডলাইন টা বাবার খুব গর্ব্বের আর আত্মশ্লাঘার কারণ ছিল বলে আমার মনে হয়, কেননা এই গল্পটা তাঁর মুখে আমি অনেকবার শুনেছি। পেনাল্টি মিস করে যে দুঃখ বাবার হয়েছিল, আমার ধারণা স্টেটসম্যান এর মত বড় এবং নামকরা কাগজে বাবার নামে ওই হেডলাইন সেই দুঃখ ধুয়ে মুছে সাফ করে দেয়।