Tag Archives: বর্ষা

কলকাতায় বর্ষা , জুলাই ২০১৯

কলকাতায় এখন বর্ষা। আষাঢ় মাস, তাই এখন এখানে রোদ আর বৃষ্টির লুকোচুরি খেলা চলছে।

সারা আকাশ উজ্জ্বল রোদে ঝলমল করছে, হঠাৎ নিঃশব্দে নিঃসাড়ে চারিদিক অন্ধকার হয়ে এলো, আর একটু পর থেকেই শুরু হলো ঝোড়ো হাওয়া আর বৃষ্টি। প্রথমে টিপটিপ, তারপরে ঝিরঝির, শেষে ঝমঝম। কিছুক্ষণ “বজ্র বিদ্যুৎসহ তুমুল বৃষ্টি, তার পরেই আবার ঝকঝকে রোদ।

একটা সময় ছিল যখন বর্ষা মানেই আমার কাছে ছিল বিভীষিকা। প্যান্ট গুটিয়ে জল কাদা পেরিয়ে কাজে গিয়েছি, কতবার রাস্তার জলের মধ্যে দিয়ে গাড়ী চালাতে গিয়ে গাড়ীর ডিস্ট্রিবিউটর এ জল ঢুকে গাড়ী বন্ধ হয়ে গেছে, লোক ডেকে গাড়ী ঠেলতে হয়েছে। বৃষ্টি বা মেঘলা আকাশ উপভোগ করার অবকাশ তখন আমার ছিলোনা। বর্ষা মানেই তখন ভোগান্তি।

কিন্তু এখন আমার অবসর জীবন, এখন কাজে বেরোবার কোন তাড়া নেই, কোন বাধ্যবাধকতা নেই। এখন আমার এমন কোন কাজ নেই যা কিনা দুই বা তিন দিন ফেলে রাখা যায়না। আমার হাতে এখন অনেক সময় আর যা খুসী করার অবাধ স্বাধীনতা।

সকালে ঘুম থেকে উঠে মেঘলা আকাশ দেখলেই বেশ মন ভালো হয়ে যায়, বাড়ী থেকে আর বাইরে বেরোতে ইচ্ছে করেনা। চা খেতে খেতে আরাম করে খবরের কাগজ পড়ি, এফ এম চ্যানেলে রবীন্দ্রনাথের বর্ষার গান শুনি।

অবসরের পরে বর্ষাকাল এর মজাই আলাদা।

আমি যে অঞ্চলে থাকি, ঢাকুরিয়া লেকের কাছে, সেখানে সাদার্ণ এভিনিউর দু’দিকে অনেক বড় বড় গাছ, বট অশ্বথ, ছাতিম, জারুল, নিম, দেবদারু, কৃষ্ণচূড়া, শিমূল আরও সব কত নাম না জানা গাছ। বছরের অন্য সময়ে জায়গাটা বেশ ময়লা লাগে, কেমন যেন যত্নের অভাব, রাস্তায় জঞ্জাল আর শুকনো পাতা পড়ে থাকে, গাছের পাতা ধুলোয় বিবর্ণ, মলিন।কিন্তু এখন এই বর্ষায় সমস্ত পরিবেশটা এখন বেশ মায়াবী সবুজ আর পরিস্কার, বৃষ্টির জলে ধোয়া গাছের পাতা চকচকে সতেজ, সজীব, ঝলমলে ~

তো এর মধ্যে একদিন গাড়ীতে সাদার্ণ এভিনিউ দিয়ে যাচ্ছি, বাইরে টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়েই যাচ্ছে, এই সময় এফ এম এ রবীন্দ্রনাথের বর্ষার গান হচ্ছে নাকি? দেখি তো, ভেবে গাড়ীর রেডিও টা চালালাম।

দূর, কোথায় রবীন্দ্রনাথ, এফ এম এর ফাজিল ছেলেটা বর্ষা আর বৃষ্টি নিয়ে নানা রকম বাজে ইয়ার্কি মেরে যাচ্ছে।

একটু পরে সে যে গান টা বাজালো, সেটা বর্ষার গান বলা যাবে কিনা জানিনা।

——–

ইলিশ টা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছো/এখন আর কেউ আটকাতে পারবেনা/

সরষে বাটাটা এবার তুমি শুরু করে দিতে পারো/

মা’কে বলে দাও রান্না চাপাতে শিগগির/

ইলিশ টা আমি পেয়ে গেছি বেলা সত্যি/

আর মাত্র ঘন্টা খানেক ব্যাস/

স্টারটিং এই খাবো দুটো মাছ ভাজা/ তার পরে ভাপা পাতুরী/

চুপ করে কেন বেলা, কিছু বলছোনা/

এটা কি টু ফোর ফোর ওয়ান ওয়ান টু নাইন?

দুচ্ছাই, এটা কি…

————–

এখন তো আর নিজে গাড়ী চালাইনা, পিছনের সীটে আরাম করে বসে গান শুনতে শুনতে জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখছি বৃষ্টিভেজা রাস্তাঘাট, যান বাহন, সিনেমার পোস্টার বড় বড় হোর্ডিং আর রাস্তার দু’পাশে সবুজ গাছপালার ফাঁক দিয়ে মেঘলা আকাশ। আর এই সব দেখতে দেখতে ভাবছি এখন আর আমায় এই শহর ছেড়ে আর কোথাও নির্ব্বাসনে যেতে হবেনা, আর ভাবতেই বেশ মন ভাল হয়ে যাচ্ছে।

আগে কুয়েতে থাকতে ছুটিতে কলকাতায় কিছুদিন কাটিয়ে যেতাম, আর প্রত্যেকবার ছুটি শেষ হয়ে যাবার আগে কলকাতা ছেড়ে যেতে হবে ভেবে মন বেশ খারাপ হয়ে থাকতো। কুয়েতে যাবার পরেও বেশ কিছুদিন লাগতো আবার ওখানকার “সুখী” জীবনে অভ্যস্ত হতে।

“সাদা কালো এই জঞ্জালে ভরা মিথ্যে কথার শহর” টা কে কেন যে এত ভাল লাগে! আর বর্ষা এলে সেই ভাল লাগাটা যেন আরও একটু বেশী!