কুয়েতে আমার কাজ ছিল IT Solutions sell করা। নানা জায়গায় যাই sales call এ, নানা লোকের সাথে দেখা হয়, কথা হয়। তো একবার কুয়েতের Ministry of Electricity তে জালালুদ্দিন আহমেদ নামে এক ইঞ্জিনীয়ার ভদ্রলোকের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম।
জালালুদ্দিন সাহেব অল্পবয়েসী হলেও খুব চৌখস এবং জ্ঞানী লোক, তাঁর চোখে মুখে কথা। আমাদের কথা শোনার বদলে তিনি নিজেই আমাদের তাঁর জ্ঞান বিতরণ শুরু করে দিলেন। তাঁর ইংরেজি উচ্চারণ শুনেই বোঝা গেল তিনি “আমাগো দ্যাশের” লোক, পরিস্কার বাংলায় ইংরেজী বলে যাচ্ছেন। আর তাঁর মুদ্রাদোষ হলো প্রতি বাক্যের ভেতর বেশ কয়েকবার “basically” বলা।
Basically, basically, basically….
কিছুক্ষন পরে ঘরের ভেতর যেন basically র ঝড় বইতে শুরু করল।
বাক্যের প্রথমে basically, বাক্যের মাঝখানে basically, বাক্যের শেষে basically। শেষে এমন হলো যে আমি আর ভদ্রলোকের কথাই শুনছিলাম না, হয়তো একটি বাক্য শুরু করেছেন, এখনো basically বলেন নি, আমি নিঃশ্বাস বন্ধ করে basically র জন্যে অপেক্ষা করছি।
সেই একটা গল্প ছিলনা, এক ভদ্রলোক অফিস থেকে ফিরে দুম দুম আওয়াজ করে তাঁর জুতো জোড়া খুলে মেঝেতে রাখতেন। আর তাঁর নীচের ফ্ল্যাটের ভদ্রলোক রোজ সন্ধ্যায় সেই দুই বার জুতো পড়ার আওয়াজ শুনে বিরক্ত হয়ে একদিন ওপরে গিয়ে তাঁকে বললেন এটা কি হচ্ছে মশাই? আস্তে, আওয়াজ না করে, জুতো খুলে রাখতে পারেন না?
তো পরের দিন ভদ্রলোক তো যথারীতি প্রথম জুতোটা দুম করে খুলে রেখেছেন, তার পরেই তাঁর মনে পড়েছে এই রে, কাল নীচের ভদ্রলোক এসে বকুনী দিয়ে গেছেন। পরের জুতোটা তিনি তাই আস্তে করে খুব সন্তর্পনে মেঝেতে রাখলেন।
এদিকে নীচের ফ্ল্যাটের ভদ্রলোক তো প্রথম জুতোর আওয়াজ পেয়ে পরের জুতোর আওয়াজের জন্যে বসে আছেন।সেই দ্বিতীয় জুতোর আওয়াজ আর আসেনা। ভদ্রলোক দুই কান চেপে বসে আছেন কখন আবার সেই আওয়াজ হবে।বেশ কিছুক্ষণ হয়ে গেছে আওয়াজ আর আসেনা, তিনি আবার ওপরে উঠে গিয়ে দরজায় বেল দিলেন।
কি হলো মশাই, সেকেন্ড জুতোটা ফেলুন, কতক্ষণ ওয়েট করাবেন?
আমিও গল্পের ওই ভদ্রলোকের মত বসে আছি, কখন আবার ম্যাজিশিয়ান এর টূপির ভেতর থেকে খরগোস বা কাঠবিড়ালীর মতো একটা basically বেরিয়ে আসে। আর basically একটা বেরিয়ে এলেই একটা গভীর স্বস্তির দীর্ঘনিঃশ্বাস নিচ্ছি।
একটি ছেলে মরুভূমির ওপর রচনা লিখতে গিয়ে লিখেছিল, “মরুভূমি তে শুধু বালি। এদিকে বালি, ওদিকে বালি। ডাইনে বালি, বাঁয়ে বালি। উত্তরে বালি, দক্ষিণে বালি, পূবে বালি, পশ্চিমে বালি। যেদিকে তাকাও শুধু বালি আর বালি।” এই ভাবেই চার পাতা লিখে গিয়েছিল সে।
জালালুদ্দিন বাবুর ওপর রচনা লিখতে দিলে আমিও ওইভাবেই লিখতাম।
এক সময় জালালুদ্দিন সাহেবের খেয়াল হলো যে তাঁর আর হাতে আর সময় নেই, অন্য একটা মিটিং এ যেতে হবে, তিনি আমাদের বললেন “আপনারা এবার আসুন তাহলে, basically…”