
মার্চ, ২০১৭। আমরা কুয়েতের বন্ধুরা ভিয়েতনাম আর কাম্বোডিয়া বেড়াতে এসেছি।
আমাদের ট্রিপ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। গত সাত দিন ভিয়েতনামে হানয় আর হ্যালং বে তে ঘুরে আর কাম্বোডিয়াতে সীম রীপ (আঙ্কোর ভাট মন্দির) দেখে এখন আমরা বাসে চেপে চলেছি কাম্বোডিয়ার রাজধানী Phnom Penh এর দিকে। সেখানে আমাদের প্ল্যান হলো Khmer Rouge এর বন্দীদের যেখানে রেখে অত্যাচার করা হতো, সেই বিখ্যাত Tuol Sleng prison দেখা। তারপরে মেকং নদীতে নৌকাভ্রমণ।
পরের দিন দেশে ফেরা।
সীম রীপ থেকে Phnom Penh ঘন্টা পাঁচেকের রাস্তা। বিকেলের আলো থাকতে পৌঁছতে হবে তাই আমরা সকাল সকাল ব্রেকফাস্ট খেয়ে মালপত্র বাসে তুলে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছি। পথে কোথাও একটা ব্রেক নিয়ে কিছু খেয়ে নেবো।
মার্চ মাসে তেমন গরম পড়েনি তখনো, আমরা বাসের জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখছি কাম্বোডিয়ার গ্রামের দৃশ্যপট। আমাদের বাংলাদেশের গ্রামের সাথে মতোই অনেকটা। আজ দিনটা বেশ সুন্দর, নীল আকাশ, নরম রোদ, চারিদিকে সবুজের মেলা। বিস্তীর্ণ সবুজ ক্ষেত, চারিদিকে তাল আর নারকেল গাছের সারি। মাঝে মাঝে কিছু জনপদ পেরিয়ে যাচ্ছি। কিছু কৃষক কে মাঠে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে, তাদের মাথায় সাদা ত্রিভুজ টোকা। গ্রামের বাড়ীগুলোর ডিজাইন একটু অন্যরকম, আমাদের চোখে বেশ নতুন লাগলো। আর তাদের মধ্যে পাকাবাড়ীর বদলে বাঁশের তৈরী বাড়ীই বেশী।

মাঝপথে আমাদের ড্রাইভার একটা জায়গায় এসে বাস থামালো। দেখলাম এখানে একটা বেশ বড় বাজার বসেছে। তরী তরকারী ফলমূল এই সব সাজিয়ে নিয়ে বসেছে বিক্রেতারা, তাদের সামনে দাঁড়িয়ে দরদাম করে কেনাকাটা করছে বহু লোক। আজ রবিবার, ছুটির দিন, তাই বোধ হয় ভীড় এক্টূ বেশী। আমরা একটা চায়ের দোকান খুঁজে চা খাচ্ছি, এমন হঠাৎ সমবেত মেয়েলী গলায় একটা আর্ত আওয়াজ পেলাম।
“ও মাগো! দেখে যাও শিগগিরি!”
আমাদের বৌরা যথারীতি দোকান গুলোতে ঘুরে দেখতে গেছে কেনার মত কিছু স্যুভেনির সেখানেপাওয়া যায় কিনা দেখতে। সেখানে গিয়ে ঢালাও করে যা বিক্রী হচ্ছে তা’ দেখে তাদের এই সমবেত আর্ত্তনাদ।
আমরা ছেলেরা কৌতূহলী হয়ে এগিয়ে গেলাম। গিয়ে আমরাও তাজ্জব।
এক এক টা দোকানে পর্য্যাপ্ত পরিমাণে পাহাড়ের মত উঁচু ঢিপ করে রাখা আছে কালো কালো নানা ধরণের পতঙ্গ ভাজা। তাদের মধ্যে আরশোলা আছে, আরো কি কি আছে কে জানে, উচ্চিংড়ে, ফড়িং, locust ইত্যাদি জাতীয় সব প্রাণী। কাঁচের শিশিতে তেলের মধ্যে চার পা ছড়িয়ে উল্টো হয়ে ভাসছে টিকটিকি। আচার নাকি? হতেও পারে।
আমার মনে আছে রাজগীর থেকে পাটনা ফেরার পথে একটা দোকানে মৌরলা মাছ ভাজা পাওয়া যেত। আমরা প্লেট ভর্ত্তি করে নিয়ে মনের সুখে খেয়েছি। আর কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে Carniviore নামে একটা বেশ নামী রেস্তোরাঁ আছে, সেখানে মেনু তে বীফ, পর্ক, চিকেন, হরিণ ইত্যাদি ছাড়াও অন্যান্য নানা বন্য জন্তুর মাংস – তার মধ্যে আছে জলহস্তী, গণ্ডার, হাতি, সিংহ, চিতাবাঘ, হায়েনা ইত্যাদি। আমাদের বন্ধুদের মধ্যে কেউ কেউ উৎসাহ নিয়ে সে সব অর্ডার করেছিল, আমি অবশ্য risk নিইনি।
কিন্তু এখানে এই সব কেঁচো সুঁওপোকা ব্যাং টিকটিকি এমন কি সাপ দেখে এই সব কেউ ভালবেসে খায় ভেবে বেশ বমি পাচ্ছিল আমাদের সবার।


আরও অবাক করার মত ব্যাপার হলো সেই সব অখাদ্য ভালবেসে কিনছে যে খদ্দেররা, তাদের মধ্যে আছে বেশ কিছু সুন্দরী কমবয়েসী মেয়েরাও। তাদের বেশভূষা দেখলে মনে হয় তারা বেশ সম্পন্ন পরিবারের উচ্চশিক্ষিত মহিলা, তাদের অনেকের হাতে ফ্যাশানী হ্যান্ডব্যাগ, চোখে রোদচশমা।
আজ রবিবার, সন্ধ্যায় বন্ধুবান্ধব এর সাথে বসে পার্টিতে হুইস্কির সাথে জমিয়ে আরশোলা আর উচ্চিংড়ে ভাজা, পরে ডিনারে ডালভাতের সাথে ব্যাঙএর চপ, সাপের ডালনা, আর টিকটিকির আচার?
ওয়াক!
মনে মনে ভাবলাম ভাগ্যিস এই সব দেশে আমি জন্মাইনি।

















